যে বিষয়টি নিয়ে পাশ্চাত্য খুবই শোর গোল করছে।
যার সূত্র ধরে ইসলাম বিরোধী অপশক্তিগুলোও ইসলামের উপর কালিমা লেপনের অপচেষ্টায়
আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে, পশ্চিমাদের এজেন্ট, কুফরী শক্তির দালালরা ইসলাম ও মুসলিমদের তাহযীব-
তামাদ্দুনকে সমূলে ধ্বংস করে মুসলিম উম্মাহকে চিরতরে পঙ্গু করার জন্য যেই ভয়ংকর মিশন নিয়ে মাঠে
নেমেছে তার নাম হচ্ছে -নারী অধিকার, নারী স্বাধীনতা।
বাস্তবতার মাথা খেয়ে স্বার্থান্ধ একদল বলে চলেছে যে, ইসলাম নারীকে শেকল পরিয়ে চার দেয়ালের মাঝে বন্দী
করে রেখেছে। ইসলাম নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে জুলুমের বোঝা (নাউযুবিল্লাহ।)
নারী সম্পর্কিত এধরণের হাজারো অভিযোগ আজ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ইসলামের উপর। অথচ বাস্তবতা হলো এর সম্পূর্ণ বিপরীত।
আমি বলবো, কেবলমাত্র ইসলামই এমন এক দীন বা জীবন ব্যবস্থা, যা নারী জাতিকে তাদের ন্যায্য অধিকার দিয়েছে।
যদি আমরা ইসলাম পূর্ব আইয়্যামে জাহেলিয়াত ও ইসলাম পরবর্তী সময়ের নারীদের অবস্থা ও অবস্থানের
দিকে তাকাই তাহলে বিষয়টি দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।
ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল ধর্মে আজ পর্যন্ত নারী জাতির অধিকারের কোনো স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।
হিন্দুধর্মে নারী জাতিকে মৃত্যু, নরক, সর্প, বীষ ও আগুন থেকেও মারাত্মক বলা হয়েছে। স্বামী ছাড়া নারী জাতির
আলাদা কোনো অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয় নি। যার কারণে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকেও তার স্বামীর সাথে সহমরণে
যেতে বাধ্য করার কথা বলা হয়েছে।
খৃষ্টান ধর্মে নারী জাতিকে চরম লাঞ্চনার বস্তু বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই তো খৃষ্টান পাদ্রী মি: সেন্ট টার্টুলিয়ামের মতে,
নারী হচ্ছে বন্য জন্তুর চেয়েও অধিক বিপদজনক। অন্য আরেক পাদ্রী সেন্ট ক্রিয়ান নারীকে বীষধর সাপের সাথে তুলনা
করে তার থেকে দূরে সরে থাকতে বলেছেন। সপ্তদশ শতকে খৃষ্টধর্মের রাজধানী রোমে বিত্তবানদের একটি কাউন্সিল
সমবেত সকল শীর্ষ ব্যক্তি এই মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে একমত হয়েছিল যে, নারীর কোন আত্মা নেই।
ইহুদী ধর্মে নারীকে পুরুষের জন্য প্রতারক বলা হয়েছে। তাদের মতে একজন সতী নারীর চেয়ে একজন পাপিষ্ট পুরুষ বহু গুণে শ্রেষ্ঠ।
বৌদ্ধধর্মে কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করাকে অলক্ষণীয় বলে মনে করা হয়। নারীর কোনো অধিকার আছে বলে স্বীকৃতি দেয় না।
এভাবে ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্মেই নারী জাতিকে পাপিষ্ট, অলুক্ষুণে, অপয়া ও ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাদেরকে কোনো অধিকার দেয়া তো দূরের কথা, তাদেরকে মানুষ বলেই স্বীকার করা হয়নি। তারা নারীদেরকে
কেবলমাত্র ভোগের পণ্য হিসেবেই গণনা করতো। -এমনিভাবে সর্বত্রই যখন নারী জাতির এমন লাঞ্চনা-গঞ্জনা আর
অসম্মান ঠিক সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে ইসলাম এসে তৎকালীন সেই বর্বর যুগের অমানুষিক জুলুম থেকে নারীকে মুক্ত
করেছে। ইসলামই একমাত্র দীন -যা নারী জাতিকে ফিরিয়ে দিয়েছে তাদের যথাযথ অধিকার।
ইসলাম এসে ধাপে ধাপে নারী জাতিকে তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।
যেই সমাজে নারী জন্মই পাপ বলে গণ্য হতো সেখানে ইসলাম সর্বপ্রথমই নারীজন্মের অধিকার নিশ্চিত করেছে।
নারী সন্তানকে হত্যাকারীদের জন্য কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে। ঘোষণা করেছে,
وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ. بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ“আর স্মরণ করো সেই দিনের কথা! যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?”
(সুরা তাকউইর, আয়াত ৮-৯)
কন্যা সন্তানের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় ইসলাম:
সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে এটি নির্ধারণ করেন স্বয়ং মহান আল্লাহ। তিনি যাকে চান তাকেই নির্দিষ্ট লিঙ্গের সন্তান দান করেন।
কাউকে আবার নি:সন্তান করে রাখেন। সুতরাং নি:সন্তানদের তুলনায় কন্যা সন্তানের অভিভাবকগণ যে কতো অকল্পনীয় মর্যাদার
অধিকারী এবং কন্যা সন্তানও যে সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান হতে পারে সে সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে,
للِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ. أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيمًا إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ
“আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং
যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন।
তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।” (সুরা শু’রা: আয়াত ৪৯, ৫০)
কুরআনের পাশাপাশি হাদীসের মাঝেও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যা সন্তানদেরকে খুবই সম্মান ও মর্যাদার
উপলক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,
“ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত; তিনি বলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; যে ব্যক্তির একটি মেয়ে
আছে আর সে তাকে তুচ্ছ মনে করে নাই, অপমানিত করে নাই এবং ছেলেদের উপর প্রাদান্য দেয় নাই।
আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” (সুনানে আবু দাউদ)
আরো ইরশাদ হয়েছে, “আনাস ইবনে মালেক রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন;
যে ব্যক্তি দুটি কন্যা সন্তান সাবালক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করল সে কেয়ামতের দিবসে আমার সাথে থাকবে।” (সহীহ মুসলিম)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
عن عقبة بن عامر يقول : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ” من كان له ثلاث بنات ، فصبر عليهن وأطعمهن وسقاهن وكساهن من جدته ، كن له حجابا من النار يوم القيامة ” (سنن ابن ماجة)
“উকবা ইবনে আমের হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে,
তিনি বলেন; যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান আছে অত:পর সে তাদের নিয়ে ধৈর্য্য ধারন করে এবং
তাদেরকে ভরণ-পোষণ দিয়ে খাওয়ায় পান করায় তার নিজ সম্পদ থেকে, ক্বিয়ামতের দিবসে ঐ কন্যা সন্তানগুলো
তার জন্য জাহান্নাম থেকে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।” (সুনানে ইবনে মাজা)
আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن أبى سعيد الخدرى ، قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : (من عال ثلاث بنات فأدبهن وزوجهن وأحسن إليهن فله الجنة) (سنن أبي داود)
“আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণিত: তিনি বলেল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা
সন্তান আছে, সে তাদেরকে আদব শিক্ষা দিয়েছে এবং বিবাহ দিয়েছে এবং তাদের সাথে সদাচরন করেছে,
তার জন্য রয়েছে জান্নাত।” (সুনানে আবু দাউদ)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
أكمل المؤمنين إيمانا أحسنهم خلقا. وخياركم خيار لنسائه وبناته“পরিপূর্ণ মু’মিন হলো সেই ব্যক্তি, যার আখলাক-চরিত্র উত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম,
যে তার স্ত্রী-কন্যাদের কাছে উত্তম।”সম্মান ও মর্যাদায় নারী-পুরুষকে সমান ঘোষণা করেছে ইসলাম:
বিবাহের পর স্ত্রীদের সাথে সর্বদা সদাচারণ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়ে ইসলাম ঘোষণা করেছে,
“আর তোমরা তাদের সাথে সদাচারণ করো।”(সূরা নিসা: আয়াত ১৯)
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِপুরুষদের উপর নারীদের অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষণা করেছে,
“নারীদের উপর যেমন তোমাদের কিছু অধিকার রয়েছে ঠিক তেমনি তোমাদের উপরও তাদের কিছু অধিকার রয়েছে।
স্ত্রীর উপর পুরুষের মর্যাদা। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।” (সূরা বাকারা : আয়াত ২২৮)
নারীদেরকে দূর্বল ও অসহায় পেয়ে যাতে করে কেউ তাঁদের উপর জুলুম ও অত্যাচার না করে সেজন্যে ইসলাম ঘোষণা করেছে,
“আর তোমরা স্ত্রীদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্যে আটকে রেখো না। আর যারা এ ধরণের জঘন্যতম অন্যায় করবে তারা
নিজেদের উপরই জুলুম করবে।” (সূরা বাকারা : আয়াত ২৩১)
এক হাদীসে রাসূল সা. বলেন,
হযরত মুয়াবিয়া বিনতে জাহিমা নবীজীর সা. এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যুদ্ধে যেতে চাচ্ছি। আপনার
কাছে পরামর্শের জন্য এসেছি। তিনি বললেন, তোমার মা আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন,
তাহলে তাঁকে সঙ্গ দাও। কেননা জান্নাত তাঁর দুই পায়ের নিচে।”(সুনানে নাসাঈ )
এই হলো ইসলামে নারীর মর্যাদা আর এটা বর্তমান বিশ্বের প্রচলিত মূল্যবোধের মতো নয় যেখানে নারীদের দেখা হয় কেবলমাত্র
যৌনতার প্রতীকরূপে এবং ভোগের উপাদান হিসেবে। এর ফলশ্রুতিতে প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে।
Collected-newbasherkella
নতুন গজল পেতে চলে আসুন HOLY TUNES এ
নতুন ওয়াজ পেতে Waz.com এ
4 Comments
Post a Comment